ঢাকা,মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৪

টেকনাফ-সেন্টমার্টিন যাত্রীবাহী জাহাজে অল্প টাকায় ব্যবহার হচ্ছে রোহিঙ্গা শিশুর শ্রম

গিয়াস উদ্দিন ভুলু,  টেকনাফ ::

ক্ষমতার বাইরে ভারী জিনিস বহন করছে সালামত। বয়স মাত্র ১০। সকাল ৬ টায় টেকনাফ দমদমিয়া জাহাজ ঘাঁটে হাজির। তারপর পর্যটকদের লাগেজ কিংবা অন্য কোন মালামাল যতই ভারী হোক তা বহন করে জাহাজে তুলে দেয়াটা তার কাজ। কিবনিময়ে মিলে ১০ থেকে ২০ টাকা সালামদ শুধু লাগেজ বহন করার দায়িত্বটা পালন করেনা । সারাদিন থাকতে হয় জাহাজের ভেতর। ক্যান্টিনের খাবার দাবার যাত্রীদের কাছে বিতরন করার দায়িত তার উপর পড়ে। সারাদিন ভর হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রমের পর এই ছোট্র শিশুর পারিশ্রমিক দেয়া হয় একশো টাকারও কম। শুধু সালামত নয়, টেকনাফ-সেন্টমার্টিন রুটে চলাচলকারী প্রত্যেকটি জাহাজে রয়েছে সালামতের মত অনেক শিশু। যারা পরিশ্রমের তুলনায় পারিশ্রমিক পাচ্ছে অনেক কম। আর এই কাজটি করছে জাহাজ কতৃপক্ষ। ছোট ছোট শিশুদের ভারী সব কাজ দিয়ে পুরোদিন খাটিয়ে দেয়া হচ্ছে অল্প পারিশ্রমিক। পর্যটন নগরী কক্সবাজার জেলার সর্ব দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের মাঝখানে প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিন। এই সৌন্দর্য্যে ঘেরা দ্বীপটিকে দেখার জন্য প্রতিবছর টেকনাফ সীমান্তে দেশ-বিদেশ থেকে হাজার হাজার পর্যটকের আগমন ঘটে। এই পর্যটকদের ভ্রমনের সুবিধার্থে প্রতিবছর প্রায় ৬/৭টি জাহাজ টেকনাফ সেন্টমার্টিন নৌ-রুটে চলাচল করে। জাহাজগুলো হচ্ছে, এলসিটি কাজল, এলসিটি কুতুবদিয়া, বে-ক্রুজ, এমভি গ্রীণলাইন, কেয়ার এন্ড ডাইন, কেয়ারী এন্ড ক্রুজ। এই জাহাজগুলোতে পর্যটকদের সেবার দেওয়ার জন্য প্রতিদিন প্রাপ্তবয়স্কদের পাশাপাশি শিশু শ্রমিকদের ঝুকিপূর্ণ কাজে ব্যবহার করছে। পরিশ্রমের তুলনায় দেওয়া হচ্ছে না নায্য পারিশ্রমিক। সরেজমিনে জাহাজগুলো পরিদর্শন করে দেখা যায়, প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে ৮ থেকে ১০ জন করে শিশুশ্রমিক জাহাজগুলোতে অবস্থান নেয়। এসমস্ত শিশুশ্রমিকরা হচ্ছে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের। জাহাজে কর্মরত শিশু শ্রমিকদের সাথে তাদের কাজের বিষয়ে আলাপ করে জানা যায়, তারা পর্যটকদের মালামাল বহন, জাহাজের রেষ্টুরেন্ট বয়সহ নানান কাজ করে থাকে।

এদিকে কম টাকা পারিশ্রমিক দিয়ে এসব রোহিঙ্গা শিশু শ্রমিকদের ব্যবহার করছে জাহাজ কর্তৃপক্ষ। একজন শিশু শ্রমিককে সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বিভিন্ন ঝুকিপূর্ণ কাজে ব্যবহার করে তাদেরকে পারিশ্রমিক দিচ্ছে ৭০/৮০ টাকা। এটাকা পেয়েও তারা প্রতিদিন খুশি হয়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ফেরত যায়। এই খুশির হওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে, শিশুশ্রমিকরা দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি সুযোগ বুঝে পর্যটকদের কাছ থেকে নগদ টাকাসহ মূল্যবান জিনিস হাতিয়ে নেয়।

গত শুক্রবার ঢাকা থেকে সেন্টমাটিনে পরিবার নিয়ে ভ্রমনে আসা একজন স্কুল শিক্ষক অভিযোগ করে বলেন, ব্যাগ থেকে তার একটি দামী মোবাইল সেট চুরি হয়েছে। ধারনা করছি, জাহাজে অবস্থানরত শিশু শ্রমিকদের মধ্যে কেউ এর সাথে জড়িত রয়েছে। এবিষয়ে জাহাজ কর্র্তৃপক্ষ কেউ দায় ভার নিতে রাজি নয়। এতে বোঝা যায় কার কি ভূমিকা তিনি আরো বলেন, সামান্য পারিশ্রমিক দিয়ে শিশু শ্রমিকদের ঝুকিপূর্ণ কাজে ব্যবহার করে অন্যায় করছে জাহাজ কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি এরা সবাই নাকি রোহিঙ্গা। আমি মনে করি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এব্যাপারে নজর দেওয়া উচিত। যাতে এসব রোহিঙ্গা শিশু শ্রমিকরা জাহাজে অবস্থান নিতে না পারে।

এব্যাপারে কেয়ার এন্ড ডাইন এবং কেয়ারী এন্ড ক্রুজ’র ব্যবস্থাপক মোঃ শাহ আলমের সাথে মুঠোফোনে আলাপ করে জানা যায়, আমাদের জাহাজে কোন শিশু শ্রমিক নিয়োগ দেওয়া হয়নি। বরং পর্যটকরা তাদের ব্যাগ ও মালামাল বহনে এসব শিশুদের ব্যবহার করে থাকে। জাহাজে চুরিসহ কোন অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে রোহিঙ্গা শিশুদের ব্যবহার না করার জন্য আমরা পর্যটকদের সতর্ক করে থাকি।

পাঠকের মতামত: